এমসিইউ-এর বাইরে মার্ভেলের আরও যত মুভি

বিংশ শতাব্দীর বড় অংশজুড়ে সুপারহিরো মুভিকে দেখা হতো ‘লেজি আর্ট’ হিসেবে। যেখানে গল্পের বুননের চেয়ে প্রাধান্য পেত সুপারহিরোদের ‘লার্জার দেন লাইফ’ দেখানো। রিচার্ড ডোনারের ‘সুপারম্যান’ ও টিম বার্টনের ‘ব্যাটম্যান’ ছাড়া কোনো মুভিই সমালোচকদের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারেনি। বরং অদ্ভুত স্টোরিলাইন, কস্টিউমের কারণে হাস্যরসের পাত্র হয়েছে সুপারহিরো মুভিগুলো। ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় মুক্তি পায় মার্ভেলের মুভি। দুর্বল স্টোরিলাইন ও কস্টিউমের কারণে বেশ সমালোচনার শিকার হয় ‘হাওয়ার্ড দ্য ডাক’ মুভিটি।

‘হাওয়ার্ড দ্য ডাক’-এর ব্যর্থতার পর বড় পর্দা থেকে একপ্রকার অবসরেই যায় মার্ভেল। ১২ বছর বিরতি দিয়ে ১৯৯৮ সালে নতুন মুভি তৈরির চেষ্টা করে তারা। নিজেদের বাঘা বাঘা চরিত্র ফেলে তাদের পছন্দ ছিল ‘ব্লেড’। কমিকসের অপরিচিত এক চরিত্রকে বড় পর্দায় তুলে আনার সিদ্ধান্ত নেন ডেভিড গোয়ার। সুপারহিরো মুভির চকমকে সেট ও রঙিন ডিজাইন থেকে সরে এসে ডার্ক ও গ্রিটি টোনের মুভি তৈরির দায়িত্ব পড়ে স্টিফেন নোরিংটোনের ওপর। নিউ লাইন সিনেমার প্রযোজনায় ১৯৯৮ সালে মুক্তি পায় ‘ব্লেড’। ৪৫ মিলিয়ন ডলারের এই মুভি আয় করে ১৩১ মিলিয়ন ডলার। মার্ভেলের প্রথম ব্যবসাসফল মুভি এটি। ‘ব্লেড’-এর সাফল্য মুভি তৈরির নতুন দুয়ার খুলে দেয় মার্ভেলের সামনে। বিভিন্ন মুভি স্টুডিওজ লুফে নিতে থাকে মার্ভেলের জনপ্রিয় চরিত্রগুলোকে। ২০০২ সালে মুক্তি পায় ‘ব্লেড’-এর দ্বিতীয় কিস্তি ‘ব্লেড ২’ ও ২০০৪ সালে মুক্তি পায় ‘ব্লেড ট্রিনিটি’।

ফক্স এক্স-মেন ইউনিভার্স

মার্ভেলের প্রথম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল এক্স-মেন

মার্ভেল কমিকসের চরিত্রগুলো নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সিনেমা তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করছিল অনেকেই। কিন্তু চরিত্রগুলো এক সুতায় বেঁধে ফ্রাঞ্চাইজ তৈরির দুঃসাহস ছিল না কারও। প্রথমবারের মতো সেই দুঃসাহস দেখায় ফক্স। ১৯৯৪ সালে মার্ভেলের কাছ থেকে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ‘এক্স-মেন’ ও ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ সিরিজের মুভি স্বত্ব কিনে নেয় ফক্স। ১৯৯৬ সালে ব্রায়ান সিঙ্গারের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক্স-মেন ফ্র্যাঞ্চাইজির দায়িত্ব। নব্বইয়ের দশকের পর্দাকাঁপানো তারকাদের ভিড় ছিল ‘এক্স-মেন’ মুভিতে।

বিশাল তারকাবহর নিয়ে শুরু হয় ‘এক্স-মেন’-এর যাত্রা। এত এত চরিত্র, এত এত হেভিওয়েট নাম—এসব সামলাতে না হোঁচট খান পরিচালক! এমন ভয় অমূলক ছিল না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নতুন এক যুগের সূচনা করে ‘এক্স-মেন’। সুপারহিরো জনরা যে শুধু মার মার কাট কাট অ্যাকশন নয়; বরং এর মধ্যেও যে লুকিয়ে থাকতে পারে আশা-নিরাশা, হতাশা-আনন্দ, যুদ্ধ ও শান্তির গল্প—তার প্রমাণ ছিল মুভিটি।

আরও পড়ুন

প্রথমবারের মতো মিউট্যান্টদের বড় পর্দায় দেখতে পেরে আবেগাপ্লুত হন ‘এক্স-মেন’ ভক্তরা। দুই বছর পর মুক্তি পাওয়া ‘এক্স ২’ বক্স অফিস ও সমালোচকদের মধ্যে সাড়া ফেলে। দু-একজন ছোটখাটো চরিত্রাভিনেতা ছাড়া সবাই ঘরে ফেরেন দ্বিতীয় মুভির জন্য। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন: দ্য লাস্ট স্ট্যান্ড’। ‘এক্স-মেন অরিজিনাল ট্রিলজি’র পর্দা নামে এই মুভি দিয়েই। এরপর থেকেই ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করে ফক্স।

এক্স-মেনের দুই প্রধান চরিত্র, প্রফেসর এক্স ও ম্যাগনিটো

বর্তমান এমসিইউর মতো ফ্র্যাঞ্চাইজভিত্তিক একটি শেয়ারড ইউনিভার্স তৈরির ইচ্ছা ছিল ফক্সের। কিন্তু মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের গল্প যেমন লিনিয়ার গতিতে এগিয়েছে, ফক্স এক্স-মেন ইউনিভার্সের গল্পটা সেভাবে এগোয়নি। নন-লিনিয়ার স্টাইলে বলা গল্পের কারণে অনেকেই এক্স-মেন ইউনিভার্সের গল্প ঠিকভাবে ধরতে পারেন না। যে কারণে একই চরিত্রে দুই বা ততোধিক অভিনেতার অভিনয় করা, এক গল্প থেকে অন্য গল্পে ঝাঁপ দেওয়া, টাইম গ্যাপ নিয়ে থাকে বেশ বিভ্রান্তি।

২০০৯ সালে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন অরিজিনস: উলভারিন’। যেখানে দেখানো হয় উলভারিনের অরিজিন স্টোরি। ২০১১ সালে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস’। ‘এক্স-মেন অরিজিনাল ট্রিলজি’র মূল দুই চরিত্র প্রফেসর চার্লস জাভিয়ের এবং ম্যাগনিটোর অরিজিন স্টোরি বলা হয় এই মুভিতে। ২০১৩ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য উলভারিন’, যা ছিল উলভারিনের অরিজিন স্টোরির অংশবিশেষ। ২০১৪ সালে ‘এক্স-মেন’-এর অন্যতম বিখ্যাত স্টোরি লাইন ‘ডেজ অব ফিউচার ফাস্ট’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয় ‘এক্স-মেন: ডেজ অব ফিউচার পাস্ট’।

এক্স-মেন: ডেইজ অফ ফিউচার পাস্ট সিনেমা থেকেই সব বিভ্রান্তির সূচনা

মুভির গল্প মূলত এগিয়েছে টাইম ট্রাভেলকে কেন্দ্র করে। অদূর ভবিষ্যতে নিজেদের বিনাশ রুখতে উলভারিনকে টাইম ট্রাভেল করে ফেরত পাঠানো হয় কয়েক দশক আগে। ইতিহাসের অন্যতম বড় একটি ঘটনা রুখে এক্স-মেনের দুর্দশা ঠেকানোর মিশন ছিল তার কাঁধে। এক্স-মেন ইউনিভার্সের সব বিভ্রান্তির সূচনা হয় এই মুভি থেকেই। ‘এক্স-মেন অরিজিনাল ট্রিলজি’র প্রতিটি গল্প মুছে যায় ইতিহাসের পাতা থেকে। শুরু হয় নতুন এক্স-মেন টাইমলাইন। যে টাইমলাইনের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন: অ্যাপোক্যালিপস’, ২০১৭ সালে ‘লোগান’, ২০১৯ সালে ‘এক্স-মেন: ডার্ক ফিনিক্স’ ও ২০২০ সালে ‘নিউ মিউট্যান্টস’। এ ছাড়া ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডেডপুল’ ও ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডেডপুল ২’, এক্স-মেন ইউনিভার্সের সঙ্গে কিছুটা জড়িত।

স্পাইডার-ম্যান

কমিক বুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র স্পাইডার-ম্যান বড় পর্দাতেও সমান জনপ্রিয়

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে সুবাতাস বইতে শুরু করছিল সুপারহিরো জনরায়। বিশেষ করে ‘ব্যাটম্যান’-এর সাফল্য দেখে বড় বড় প্রোডাকশন কোম্পানি সুপারহিরো সিনেমা তৈরির জন্য উঠেপড়ে লাগে। আগেই এক্স-মেন ফ্র্যাঞ্চাইজ লুফে নিয়েছিল ফক্স। সনির নজর ছিল স্পাইডার-ম্যানের দিকে। মার্ভেল প্রথমে তাদের ২৫টি চরিত্রের স্বত্ব মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলারে সনির কাছে বিক্রির প্রস্তাব দেয় সনিকে। কিন্তু সনির তৎকালীন প্রডিউসার ইয়াইর ল্যান্ডাউ হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই প্রস্তাব। তার মতে, স্পাইডার-ম্যান ছাড়া অন্য চরিত্রের কোনো দাম নেই। অবশেষে ১০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মার্ভেলের কাছ থেকে স্পাইডার-ম্যানের মুভি স্বত্ব কিনে নেয় সনি।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে স্পাইডার-ম্যানকে নিয়ে সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন পরিচালক জেমস ক্যামেরন। গল্প, স্ক্রিপ্ট, অভিনেতা পর্যন্ত ঠিক হয়ে যাওয়ার পর মনমতো প্রযোজক না পাওয়ায় আটকে যায় সে প্রজেক্ট। ১০ বছরের মধ্যে দুবার মার্ভেলের সঙ্গে কাজ করার অনেক কাছে এসেও ব্যর্থ হন জেমস ক্যামেরন। সনিও চেয়েছিল স্পাইডার-ম্যানের দায়িত্ব জেমস ক্যামেরনের হাতেই দিতে। কিন্তু তত দিনে সুপারহিরো জনরা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন তিনি।

স্যাম রাইমির স্পাইডার-ম্যান ট্রিলজি

হাইস্কুল পড়ুয়া পিটার পার্কার এবং মেরি জেইন ওয়াটসনের গল্প নিয়ে সন্দিহান ছিল সনি

সনির কাছ থেকে স্পাইডার-ম্যানকে বড় পর্দায় তুলে ধরার দায়িত্ব পান পরিচালক স্যাম রাইমি। স্পাইডার-ম্যান চরিত্রে নেওয়া হয় অভিনেতা টবি ম্যাগুইয়ারকে। ২৬ বছর বয়সী এই অভিনেতা কীভাবে ১৭ বছর বয়সী স্কুলবয় চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলবেন, সে নিয়ে প্রশ্ন ছিল সবার মনে। এ ছাড়া হাইস্কুলপড়ুয়া পিটার পার্কার ও মেরি জেইন ওয়াটসনের যে গল্প ‘স্পাইডার-ম্যান’-এ দেখানো হয়েছিল, দর্শকেরা সেটা কীভাবে নেবেন, এই ব্যাপারে সনির সংশয় ছিল। অ্যাকশন সিনেমার ফর্মুলা ছুড়ে ফেলে ‘স্পাইডার-ম্যান’-এ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা, সুপারহিরো ও সাধারণ জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা নিয়ে সংগ্রাম এবং ফাদার ফিগারকে হারানোর দুঃখকে। নতুন ধারার এই মুভি মন ছুঁয়ে যায় দর্শকদের।

২০০৪ সালে মুক্তি পায় ‘স্পাইডার-ম্যান ২’। সুপারহিরো মুভি ইতিহাসের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই মুভিকে। সুপারহিরো–জগতের চাপ কীভাবে পিটার পার্কারকে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে, কীভাবে সুপারহিরো–জগতের সমস্যা ব্যক্তিগত জীবনকে ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে—সবটাই উঠে এসেছিল ‘স্পাইডার-ম্যান ২’-এর গল্পে। প্রথাভাঙা এক সুপারহিরোর গল্প ছিল ‘স্পাইডার-ম্যান ২’।

শ্যুটিংয়ের ফাঁকে কমিকস পরছেন স্যাম রাইমি ও টবি ম্যাগুইয়ার

তৃতীয় সিনেমার প্রোডাকশন থেকেই শুরু হয় স্যাম রাইমি ও সনি প্রযোজকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। স্যাম রাইমির ইচ্ছা ছিল দুই ভিলেন নিয়ে পুরো সিনেমাটি শেষ করার। পুরোনো ভিলেন হ্যারি ওসবর্ন ও নতুন ভিলেন স্যান্ডম্যানকে কেন্দ্র করে পুরো গল্প তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু বেঁকে বসেন প্রযোজক আভি আরাড। রাইমিকে নির্দেশ দেন গল্পে পরিবর্তন এনে মূল ভিলেন হিসেবে ভেনম ও লাভ ইন্টারেস্ট হিসেবে গোয়েন স্টেসি চরিত্রকে যোগ করতে। রাইমি চেয়েছিলেন যদি আরেকটি ভিলেন যোগ করতেই হয়, তবে সেটি হতে পারে ভালচার। আর ভেনমকে যদি যোগ করতেই হয়, তাহলে মূল ভিলেন হিসেবে পরিচয় না করিয়ে পরবর্তী সিনেমার জন্য তাকে তুলে রাখা হোক। কথা শুনতে নারাজ ছিলেন আভি আরাড। অবশেষে পরিবর্তিত স্ক্রিপ্টের ‘স্পাইডার-ম্যান ৩’ মুক্তি পায় ২০০৭ সালে।

বক্স অফিসে সাফল্য পেলেও প্রথম দুই সিনেমার মতো গল্প মন ছুঁয়ে যেতে পারেনি মানুষের। বরং গতানুগতিক অ্যাকশন মুভি স্ক্রিপ্টের মতো হওয়ায় নিন্দুকদের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে রাইমিকে। তা সত্ত্বেও পরবর্তী তিন সিনেমা তৈরির জন্য তাঁর সঙ্গে চুক্তি করে সনি। কিন্তু মুভির গল্প ও ভিলেন নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে আরেক দফা দ্বন্দ্ব হয় রাইমির। নিজের গল্পে বারবার এমন হস্তক্ষেপ পছন্দ ছিল না রাইমির। তাই ২০১০ সালে পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দেন স্যাম রাইমি। তিন সিনেমা দিয়েই শেষ হয় ‘স্পাইডার-ম্যান’-এর গল্প।

অ্যামাজিং স্পাইডার-ম্যান ফ্র্যাঞ্চাইজি

অভিনয় ও সিজিআইয়ে এগিয়ে থাকলেও বাজে স্টোরিলাইনের কারণে ব্যর্থ হয় অ্যামাজিং স্পাইডার-ম্যান ফ্র্যাঞ্চাইজি

স্যাম রাইমির বিদায়ের পর স্পাইডার-ম্যানের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মার্কিন পরিচালক মার্ক ওয়েবের হাতে। পুরোনো সবকিছু ঝেড়ে ফেলে নতুন স্পাইডার-ম্যানকে নিয়ে পথচলা শুরু করে সনি। ব্রিটিশ অভিনেতা অ্যান্ড্রু গারফিল্ডকে বেছে নেওয়া হয় নতুন স্পাইডার-ম্যান হিসেবে। লাভ ইন্টারেস্ট গোয়েন স্টেসি চরিত্রে অভিনয় করেন এমা স্টোন। ২০১২ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য অ্যামেইজিং স্পাইডার-ম্যান’। গতানুগতিক স্টোরিলাইন সবার পছন্দ না হলেও বক্স অফিসে বেশ ভালো করে মুভিটি। তবে ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য অ্যামেইজিং স্পাইডার-ম্যান ২’ হতাশ করে সবাইকে। বক্স অফিসের সফলতাও বাঁচাতে পারেনি ফ্র্যাঞ্চাইজির ভবিষ্যৎ। সনির হস্তক্ষেপে বড় একটি অংশ কেটে ফেলা হয় মুভি থেকে। যার প্রভাব পুরো সিনেমাজুড়ে ছিল স্পষ্ট। ২০১৫ সালে সনি ঘোষণা দেয়, মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষেক হতে যাচ্ছে স্পাইডার-ম্যানের। সনি ও মার্ভেলের মধ্যকার এক চুক্তির অংশ হিসেবে স্পাইডারম্যান এমসিইউতে ব্যবহার করতে পারবে মার্ভেল। নতুন স্পাইডার-ম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয় টম হল্যান্ডের নাম। ইতি টানা হয় অ্যামেইজিং স্পাইডার-ম্যান ইউনিভার্সের।

সনি স্পাইডার-ম্যান ইউনিভার্স

সনি স্পাইডার-ম্যান ইউনিভার্সের মাত্র তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে

মার্ভেলের সঙ্গে সনির চুক্তি ছিল শুধু স্পাইডার-ম্যানের ব্যাপারে। ‘স্পাইডার-ম্যান’-এর বাকি সব চরিত্রের স্বত্ব কিন্তু এখনো সনির হাতে। সেই লুপহোলটাই কাজে লাগিয়েছে তারা। ২০১৮ সালে সনির ব্যানার থেকে মুক্তি পায় ‘ভেনম’। ‘স্পাইডার-ম্যান’ কমিকসের জনপ্রিয় ভিলেন বড় পর্দায় আসে স্পাইডারম্যানকে ছাড়াই। ২০২১ সালে মুক্তি পায় ‘ভেনম’-এর সিক্যুয়েল ‘ভেনম: লেট দেয়ার বি কার্নেজ’। ‘ভেনম’-এর গল্পের সঙ্গে স্পাইডার-ম্যানের নাম আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকলেও বড় পর্দায় তা ছিল অনুপস্থিত। ২০২২ সালে মুক্তি পায় এই ইউনিভার্সের তৃতীয় সিনেমা ‘মর্বিয়াস’। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই মুভি। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় কোটি কোটি মিম তৈরি হয় সিনেমার ডায়লগ ও চরিত্রদের নিয়ে।

ছয় বছর, তিন সিনেমা মুক্তির পরও সনির নতুন ইউনিভার্সে দেখা মেলেনি স্পাইডার-ম্যানের; বরং নিত্যনতুন স্পাইডার-ম্যান ভিলেন যুক্ত হচ্ছে এই ইউনিভার্সের অংশ হিসেবে। ২০২৪ সালে এই ইউনিভার্সের অংশ হিসেবে মুক্তি পাবে ‘ক্র্যাভেন দ্য হান্টার’, ‘ম্যাডাম ওয়েব’ ও ‘ভেনম ৩’। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী তিন সিনেমায়ও হয়তো স্পাইডারম্যানের টিকিটিও দেখতে পাওয়া যাবে না। স্পাইডার-ম্যানকে ছাড়া গড়ে তোলা এই স্পাইডারম্যান ইউনিভার্স নিন্দুক ও দর্শকদের কাছে হাসির পাত্র হলেও বক্স অফিসে বেশ সফল। সে কারণেই হয়তো বারবার ব্যর্থ হয়েও ঠিকই একের পর এক সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে সনি ‘স্পাইডার-ম্যান’ ইউনিভার্সের অংশ হিসেবে।

অন্যান্য মুভি

আলাদা আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু করলেও এমসিইউর প্রতাপের সামনে টিকতে পারেনি বাকি মুভিগুলো
  • ফক্স ও সনির দেখাদেখি মার্ভেলের লভ্যাংশে ভাগ বসাতে চেয়েছিল ইউনিভার্সেল স্টুডিওজ। ২০০৩ সালে ইউনিভার্সেলের ব্যানারে মুক্তি পায় ‘হাল্ক’। পরিচালক অ্যাং লির সিনেমা বক্স অফিসে ভালো করলেও তা ফ্র্যাঞ্চাইজ শুরু করার মতো যথেষ্ট ছিল না।

  • এক্স-মেন ইউনিভার্সের বাইরেও কিছু একক মুভি মুক্তি দিয়েছিল ফক্স। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডেয়ারডেভিল’ ও ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ইলেকট্রা’ ছিল একই ফ্র্যাঞ্চাইজের অংশ।

  • ‘এক্স-মেন’-এর মতো ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা ছিল ফক্সের। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ‘এক্স-মেন’ ও ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’-এর মধ্যে ক্রসওভার করানোর। কাল্ট ফলোয়িং থাকলেও বক্স অফিসে সুবিধা করতে পারেনি তাদের দুই সিনেমা ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ ও ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর: রাইজ অব সিলভার সার্ফার’। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’-এর নতুন মুভি ‘ফ্যান্টাস্টিক’। দর্শক থেকে শুরু করে নিন্দুক, সবার কাছেই সমালোচিত হয় মুভিটি।

  • স্পাইডার-ম্যানের পাশাপাশি গোস্ট রাইডার নিয়েও ফ্র্যাঞ্চাইজ শুরু করার ইচ্ছা ছিল সনির। এই ইউনিভার্সের অংশ হিসেবে মুক্তি পায় দুটি সিনেমা। ‘গোস্ট রাইডার’ ও ‘গোস্ট রাইডার: স্পিরিট অব ভেনজেন্স’।

আরও পড়ুন