অ্যানিমে কথন
দুর্ধর্ষ লড়াইয়ের অ্যানিমে
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: মারমারি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নিজেকে মারপিট থেকে শত হাত দূরে রাখো, সুস্থ থাকো।
কিশোর আলোর সেপ্টেম্বর ২০২৪–এর সংখ্যা খুলে রীতিমতো চমকে গেলাম। ম্যাগাজিন খুলে চিঠিপত্র বিভাগে চোখ রাখা আমার নিয়মিত অভ্যাস। সেখানে তাকাতেই দেখি, সাকুরা হারুকা আমার দিকে রীতিমতো ঘুষি পাকিয়ে বসে আছে! বুঝলাম, পরিস্থিতি বড় একটা সুবিধার নয়। সাবধানে পড়া শুরু করলাম চিঠিগুলো।
হুমকির কারণ বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না। তোমাদের একজন আবেদন জানিয়েছ, উইন্ড ব্রেকার অ্যানিমে নিয়ে রিভিউ লেখার জন্য। সাকুরা হারুকা সেই অ্যানিমের মুখ্য চরিত্র। সাকুরা হারুকা নামটা কি তোমাদের একটু বিভ্রান্ত করেছে? আমি বিভিন্ন অ্যানিমেতে সাকুরা ও হারুকা নামের ভিন্ন ভিন্ন নারী চরিত্র দেখেছি। তবে উইন্ড ব্রেকার গল্পের নায়ক সাকুরা হারুকা একজন কিশোর!
সে কথা নাহয় থাক, আগের কথায় ফিরি—অনুরোধ (কিংবা বলা ভালো, আদেশ) শুনে আমি কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলাম। অ্যানিমে-কথন লেখা শুরু করার পর থেকে তোমাদের অনেক অনুরোধ এসেছে পত্রিকার পাতা বয়ে; কিন্তু কোনোটাই ঠিক রাখা হয়নি। আমি ভেবেছি, ওসব বিখ্যাত অ্যানিমের কথা সবাই জানে; বরং যেগুলো একটু অন্তরালে চলে গেছে কিন্তু ভালো, সেইগুলোর কথা বলা বেশি জরুরি। তবে মনে মনে এ–ও ঠিক করা ছিল যে, অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় অ্যানিমে, যেগুলোর রিভিউর জন্য তোমরা অনুরোধ রাখছ, তা–ও কোনো না কোনো সময় ঠিক রিভিউ করব। এ ক্ষেত্রে কিআ সম্পাদকের অনুরোধও একপ্রকার বলা যায় থামিয়েই রেখেছি। ফলে সাকুরার ঘুষি কিআর পক্ষ থেকেও সরাসরি সাবধানবাণী হতে পারে!
তা যা–ই হোক, মূলত এই রিভিউ লেখার পেছনে যা সবচেয়ে বেশি তাগিদ দিল, তা হলো ব্যক্তিগত কিছু হতাশার অভিজ্ঞতা। এমন অনেকবারই হয়েছে, কোনো নাটক বা চলচ্চিত্র দেখে আমি এতটাই আনন্দিত হয়েছি যে সেই আনন্দ একা একা উপভোগ করা রীতিমতো অন্যায় বলে মনে হয়েছে। ফলে আমি দৌড়ে গিয়ে চেষ্টা করেছি প্রিয় বন্ধুদের সেটির কথা জানতে। এসব ক্ষেত্রে ওদের উদাসীনতা বড় নিয়মিত। আমি বলি দেখতে, ওরা হ্যাঁ-হু বলে পাশ কাটায়, আর দেখে না । ফলে ওদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করা সম্ভব হয় না। এসব কথা মনে হতেই ভাবলাম, তোমরাও হয়তো ওই একইভাবে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ উদ্যাপন করতে না পেরে মনঃকষ্টে রয়েছ। অতএব, আজ অনুরোধ রাখতেই হচ্ছে।
উইন্ড ব্রেকার–এর গল্প রচয়িতা সাতোরু নিই লেখালেখি নিয়ে প্রকাশিত হতে শুরু করেছেন খুব বেশি দিন হয়নি। ২০১৬ সালে প্রথম তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ‘মাঙ্গা বক্স’ অনলাইন ম্যাগাজিনে। তাঁর প্রথম মাঙ্গাটি ছিল ব্যাডমিন্টন খেলার ওপর তৈরি একটি গল্প। জাপানের অন্যতম বড় মাঙ্গা প্রকাশনী কোদানশা থেকে পরে পাঁচটি ভলিউম আকারে সম্পূর্ণ গল্প ছেপে বেরোয়। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় গল্পটিও তিনি খেলানির্ভর করতে আগ্রহী হন। তাতে বাদ সাধেন সম্পাদক। তাঁকে অন্য কিছু নিয়ে লিখতে পরামর্শ দেন তিনি। যার ফলে আসে ডানপিটে-মারকুটে ছেলেদের দল নিয়ে তৈরি উইন্ড ব্রেকার গল্পের প্রাথমিক ধারণা। লেখক নিজে এ ধরনের গল্প ছেলেবেলায় প্রচুর পড়েছেন, এখনো পড়েন। তাই সেসব গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গঠন করেন উইন্ড ব্রেকার-এর চরিত্রদের রূপরেখা। পরবর্তী সময়ে তা পরিমার্জন, সংশোধন এবং পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়ায় সিরিজটি। উইন্ড ব্রেকার কোদানশার ‘ম্যাগাজিন পকেট’ ওয়েবসাইটে যাত্রা শুরু করে। সেই সঙ্গে বর্তমানে ভলিউম আকারেও একযোগে প্রকাশিত হচ্ছে। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৮টি ভলিউম প্রকাশিত হয়েছে।
গল্পের শুরুতেই দেখা যায়, হারুকা সাকুরার মানসিক লড়াইয়ের এক দৃশ্য। সূক্ষ্ম এক দড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছে সে। তার জগৎটা অন্ধকার হয়ে আছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের তিরস্কার আর বাঁকা দৃষ্টির তীক্ষ্ণ বাণে বিদ্ধ হয়ে। শৈশব থেকেই চলছে হারুকার এই লড়াই। মূলত ওকে দেখতে কিছুটা অন্য রকম। মাথায় অর্ধেক চুল সাদা; আর বাকি অর্ধেক কালো; দুটি চোখের মণির রংও ভিন্ন। সমাজ তার এই অস্বাভাবিকতা মেনে নিতে পারেনি কখনো। প্রতিবাদ অবশ্য সাকুরাও করেছে। সমাজকে জয় করতে চেয়েছে শক্তি দিয়ে। কারও তোয়াক্কা না করে আঁকড়ে ধরেছে নিজের ডানপিটে স্বভাব। কেউ ওকে ইট মারতে এলে ছুড়ে মেরেছে পাটকেল। মেরে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বেয়াড়া কিশোরদের দম্ভ, যারা কখনো ওর প্রতি বন্ধুত্বের হাত না বাড়িয়ে বরং করতে এসেছে শত্রুতা। তবে কঠোর আর মারকুটে হলেও তার ভেতর দয়া ও মমতাও আছে যথেষ্ট। পথে কাউকে বিপদে পড়তে দেখলে, কারও ওপর অহেতুক নির্যাতন হতে দেখলে, নির্দ্বিধায় তার সাহায্যে এগিয়ে যায় সাকুরা। তাতে নিজের কোনো লাভ হলো কি না, তা নিয়ে ভাবার দায় দেখায় না একদম।
নিজ শহর ছেড়ে সাকুরা চলে আসে অন্য এক শহরে। সেখানকার এক স্কুলে ছাত্র হিসেবে যোগ দেওয়াই তার উদ্দেশ্য। মূলত সে শুনেছে, এই স্কুলে তার মতো ছেলেপেলের অভাব নেই, যারা লড়াই করে নিজের সামর্থ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। তার ইচ্ছা এই স্কুলের সেরা লড়াকুর আসনটা দখল করবে। দুর্বলের ঠাঁই নেই ফুউরিন উচ্চবিদ্যালয়ে; দুর্বলদের মধ্যে থাকার ব্যাপারে আগ্রহীও নয় সাকুরা। কারণ, দুর্বলরা কথা দিয়ে আঘাত করে; বাহুবলে অধিকার আদায়ের সামর্থ্য তাদের নেই।
স্কুলে যোগ দেওয়ার ঠিক আগের দিন শহরের পথে হাঁটছিল সাকুরা। হঠাৎ দেখতে পেল, কিছু পাজি ছেলে-ছোকরা মিলে একটা মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে। স্বভাবতই সাকুরা ঝাঁপিয়ে পড়ল মেয়েটিকে বাঁচাতে। ছেলেগুলোকে নিমেষেই ধরাশায়ী করে ফেলল সে। কৃতজ্ঞ মেয়েটি ওকে নিয়ে এল খাবারের দোকানে। মেয়েটির নাম কোতোহা, সে এলাকারই একটি রেস্তোরাঁয় রাঁধুনি। সাকুরাকে রান্না করে খাওয়ায় সে। কথায় কথায় জেনে নেয় সাকুরার শহরে আসার উদ্দেশ্য। সব শুনে মেয়েটি বলে, ওর একমুখী আর আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা নিয়ে চললে সাকুরা কখনো ফুউরিন উচ্চবিদ্যালয়ের সেরা লড়াকুর আসন দখল করে নিতে পারবে না। কথাটা সাকুরার ঠিক হজম হয় না, সে বেরিয়ে চলে যায় রেস্তোরাঁ থেকে।
এদিকে মার খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়া ছেলেদের দল ফিরে আসে আরও শক্তি সঞ্চয় করে। রাস্তায় সাকুরার সঙ্গে আবার শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। এসব টের পেয়ে কোতোহা বাইরে এসে আবার বিপদে পড়ে। ওকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয় সাকুরাও। এতজনের বিপক্ষে অসহায় কোতোহাকে বাঁচিয়ে আহত সাকুরার পক্ষে লড়াই করা মুশকিল হয়ে পড়ে; কিন্তু এই সময় হাজির হয় ফুউরিন স্কুলের ছাত্রদের চারজন। এরা মিলে ওই বিরাট প্রতিপক্ষ দলকে পরাজিত করে। পরিস্থিতি দেখে অবাক হয় সাকুরা। বুঝতে পারে, ফুউরিন স্কুলের ছাত্রদের সে যেমন আত্মকেন্দ্রিক আর শক্তিপ্রেমী মনে করেছিল, তারা আসলে তা নয়। তারা মূলত কাজ করে মানুষকে রক্ষার জন্য। এলাকায় গন্ডগোল হলে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিঃসংকোচে, ফলে এলাকাবাসীও তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এমনকি তারা সাকুরাকেও মাথায় তুলে রাখে বদমাশদের হাত থেকে এলাকাকে বাঁচানোর লড়াইতে শামিল হওয়ার জন্য। সাকুরার মনে ক্ষীণ আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে, সে ভাবে এই এলাকার মানুষগুলো একটু ভিন্ন। তারা ওর ফেলে আসা একচোখা সমাজের মানুষগুলোর মতো একেবারেই নয়।
এভাবেই চলতে থাকে অ্যানিমে উইন্ড ব্রেকার–এর কাহিনি। গল্পের প্রধান চরিত্র সাকুরা হলেও সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র সে নয়। ফুউরিন স্কুলের ক্ষমতার শীর্ষে থাকা উমেমিয়া দখল করে রেখেছে সেই জায়গা। সে একই সঙ্গে শক্তিশালী ও দয়াশীল। স্কুলের প্রতিটি ছাত্র তার কাছে সমান। সে সবার জন্য আছে। প্রয়োজন হলে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায় শত্রুর সামনে। আবার মুহূর্তেই বনে যায় পরম বন্ধু। গাছের সেবা করে তার যেমন আনন্দ হয়, তেমনি আনন্দ হয় শৈশবের বন্ধু কোতোহাকে সীমাহীন প্রশংসা করে যেতে। শত্রুকেও বন্ধু বানিয়ে ফেলার অনায়াস ক্ষমতা আছে উমেমিয়ার।
আবার গল্পের আরেক চরিত্র হিইরাগির কথাই ধরা যাক। সে–ও লড়াইয়ে খুব পটু; কিন্তু স্কুলের সেরার আসনের জন্য সে ময়দানে নামেনি; বরং স্বেচ্ছায় থেকে গেছে উমেমিয়ার সহযোগী হয়ে। আবার সুয়ো নামের ছেলেটি তুখোড় মার্শাল আর্ট জানলেও তার ভেতর সেসব নিয়ে কিছুমাত্র অহংকার নেই; বরং লড়াই না করে পারলেই যেন খুশি। সারাক্ষণ হালকা কথায় পরিস্থিতি আনন্দময় করে রাখে সে। তবে সাকুরার মতো লড়াকু ছেলেও রয়েছে স্কুলে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে বলা যায় সুগিশিতার কথা; উমেমিয়াকে নিয়ে কেউ কিছু বললে খেপে ব্যোম হয়ে যায় সুগিশিতা। স্কুলের একেবারে প্রথম দিনেই সে জন্য সাকুরার সঙ্গে মারামারি বাধিয়ে দেয় সে। আর অতি অবশ্যই আছে নিরেই নামের ছেলেটি, যে মারামারি একেবারে কিছুই পারে না, তবে ব্যাপারটা নিয়ে তার ভীষণ আগ্রহ। স্কুলের সবার তথ্য টোকা আছে নিরেইর নোটবুকে।
ক্রমে ক্রমে আরও অনেক চরিত্র যুক্ত হয় গল্পে। স্কুলের এবং স্কুলের বাইরের এসব চরিত্র নিয়ে চলতে থাকে ঘটনাক্রম। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, ফুউরিন উচ্চবিদ্যালয়ের যে ছাত্রবাহিনী এলাকা রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে, তাদের একত্রে বলা হয় বোফুউরিন। স্কুলের যারা লড়াইয়ে সক্ষম, তারা সবাই এই বাহিনীর অংশ। বাহিনীর প্রধান উমেমিয়া। তবে তার অধীন চারজন সেনাপতি রয়েছে, এদের একজন হচ্ছে হিইরাগি। এই চারজনের অধীন আছে কয়েকটি করে দল। প্রাথমিকভাবে স্কুলে যোগ দেওয়ার পর এমন একটি নিম্নস্তরের দল থেকেই যাত্রা শুরু করে সাকুরা। তবে গল্পের একদম প্রাথমিক পর্যায়েই সে বিবাদে জড়িয়ে যায় পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রতিপক্ষ দল শিশতোউরেনের সঙ্গে।
১৩ পর্বের এই ধারাবাহিকের অনেকটা অংশজুড়ে রয়েছে শিশতোউরেনের সঙ্গে বিবাদ, লড়াই ও তার পরিণতির খুঁটিনাটি। ওই বাহিনী একেবারে নির্মম। তারা হেরে যাওয়াদের দলের সদস্য বলে মনে করে না। লড়াই করে দলের শীর্ষস্থান অর্জনের চেষ্টা করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এই দলের দুজন উল্লেখযোগ্য সদস্য হচ্ছে তোগামে ও তোমিয়ামা। দুজনেই দুর্ধর্ষ ফাইটার, বিশেষ করে তোমিয়ামা, শক্তিশালী কোনো প্রতিপক্ষ খুঁজে পেলে তার আর হুঁশ থাকে না। তক্ষুনি লড়াই করার জন্য একেবারে পাগল হয়ে ওঠে। তোমরা যারা উইন্ড ব্রেকার সিরিজটি দেখবে, আশা করি তারা শিশতোউরেনের সঙ্গে বোফুউরিন বাহিনীর মারপিটের দৃশ্যগুলো বেশ উপভোগ করবে।
আগাগোড়া বর্ণনার মধ্য দিয়ে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছ যে এই সিরিজ মূলত লড়াইনির্ভর। হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট, যা ভিডিও গেমস এবং অ্যানিমে জগতে প্রায় সমানতালে বিখ্যাত, তা এখানে পুরোদমে রয়েছে। তোমাদের যদি স্ট্রিট ফাইটার, ব্ল্যাজ-ব্লু, গিল্টি গিয়ার, ফেটাল ফিউরি, দ্য কিং অব ফাইটার্স, মারভেল ভার্সেস ক্যাপকম, ইনজাস্টিস ১-২, মরটাল কমব্যাট–জাতীয় গেমস খেলে ভালো লেগে থাকে, তবে এই গল্প হতে পারে তোমাদের জন্য আদর্শ। আবার যদি ভালো লেগে থাকে দ্য গড অব হাইস্কুল, বুচ্চিগিরি, ইক্কিতোউসেন, মেগালো বক্স, গ্রাপলার বাকি, কেঙ্গেন আশুরার মতো লড়াইয়ের অ্যানিমেগুলো, তবে উইন্ড ব্রেকার–এর অ্যাকশন তোমাদের ভালো লাগবে। লড়াইয়ের দৃশ্যগুলোতে মসৃণ অ্যানিমেশন আমাকে অন্তত আনন্দ দিয়েছে। তা ছাড়া প্রায় প্রতিটি মূল চরিত্রের লড়াইয়ের ভঙ্গিতে আছে পার্থক্য। ফলে প্রতিটি মারামারি আলাদা আনন্দ দিয়েছে। তা ছাড়া লড়াই এবং এর বাইরের শান্ত দৃশ্যগুলোতেও উপযুক্ত সুর ও ছন্দ ব্যবহার করেছে স্টুডিও ক্লোভারওয়ার্কসের প্রোডাকশন দল। তোমরা এর আগেও বোধ হয় এই স্টুডিওর তৈরি অ্যানিমে দেখেছ; স্পাই x ফ্যামিলি, হোরিমিয়া, বোচ্চি দ্য রক, দ্যাট প্রমিজড নেভারল্যান্ড, রাসকেল ডাজেন’ট ড্রিম অভ বানি গার্ল সেনপাইয়ের মতো চমৎকার কিছু অ্যানিমে তৈরি করেছে তারা। এ ছাড়া যত দূর জানি উইন্ড ব্রেকার–এর দ্বিতীয় সিজনের কাজও শুরু হচ্ছে শিগগিরই।
সিরিজের শুরুতে ব্যবহৃত গান জেত্তাই রেইডো আর শেষের গান মুতেকি, দুটিই বেশ ভালো লেগেছে আমার। তোমরা চাইলে শুনে দেখতে পারো। তবে সবারই ভালো লাগবে এই নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।
তোমরা হয়তো ভাবতে পারো সাকুরার কথা একটু কমই বলা হলো। সে দায় মেনে নিচ্ছি। মূলত উইন্ড ব্রেকার গল্পটা সাকুরার হলেও তাতে বাকি চরিত্রগুলোও যথেষ্ট জরুরি। লেখক শুরুতে তো সাকুরাকে মূল চরিত্রই বানাতে চাননি, চেয়েছিলেন উমেমিয়াকে মূল চরিত্র করে গল্প লিখতে। পরে গল্পকে আরও বিশেষ মাত্রা দিতে নিয়ে আসেন সাকুরার চরিত্রটি। তার ভেতরে যোগ করেন ভিন্ন রকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। ফলে চরিত্র হিসেবে সাকুরা কাঠখোট্টা লড়াকু পুরুষ একেবারেই নয়, নানান সময় তাকে হঠাৎ লজ্জা পেতেও দেখা যায়। সাকুরা নিত্যই শিখছে তার পারিপার্শ্বিক আর সহপাঠীদের থেকে। জেনে নিচ্ছে কীভাবে একাকী পরিস্থিতি থেকে আসা যায় একত্র অবস্থায়। কীভাবে নিজের জন্য না বেঁচে নেমে পড়া যায় মানুষের কল্যাণে। ওরা সবাই মিলেই সেসব শিখছে একটু একটু করে। সুতরাং, তোমরা যারা অ্যানিমেটি দেখবে, তারা আশা করি লড়াইয়ের বাইরে গিয়েও ওই বিশেষ শিক্ষাটুকুর দিকে তাকাবে সময় করে। কারণ সমাজ সংস্কার করতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই।