জয় বাংলা কনসার্টের ফেরা
‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে,
আমরা কজন নবীন মাঝি, শক্ত হাতে হাল ধরেছি…’
ঐতিহাসিক এই গান যখন গাইতে শুরু করল ক্রিপটিক ফেইট, সঙ্গে সঙ্গে যেন বিদ্যুৎ খেলে আর্মি স্টেডিয়ামে। কানায় কানায় পূর্ণ জনতা একসঙ্গে গলা ছেড়ে গাইতে লাগল মুক্তিযুদ্ধের সময় অসমসাহস জোগানো এই গান। ব্যান্ডটির হেভিমেটাল পরিবেশনায় কখনো চিৎকার করে গান না করা মানুষটিও নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। ভিআইপি লাউঞ্জে বসে এ সবকিছুই উপভোগ করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন দারুণ সময়ের অবতারণা ঘটেছিল ৮ মার্চের জয় বাংলা কনসার্টে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করা হয় জয় বাংলা কনসার্ট। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়মিত হয়েছে এ বিশাল আয়োজন। করোনাভাইরাসের থাবায় গত দুই বছর বন্ধ ছিল জনপ্রিয় এই কনসার্ট। মহামারির অমানিশা কেটে যাওয়ার পর তাই আবারও ফিরল কনসার্টটি। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত এই কনসার্টের ইভেন্ট ব্যবস্থাপনায় ছিল মেইনস্প্রিং লিমিটেড।
দেশের সেরা ব্যান্ডগুলোকে এভাবে এক মঞ্চে গাইতে দেখার সুযোগ খুব একটা মেলে না। আর বিনা মূল্যে যাওয়ার সুযোগ থাকায় এটা নিয়ে সব সময়ই কিশোর-তরুণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে আলাদা এক উন্মাদনা তৈরি হয়। তার ওপর দুই বছরের বিরতি এটাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
দুপুরের তপ্ত রোদ মাথায় নিয়েই গুটি গুটি পায়ে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে থাকেন দর্শকেরা। ‘আরেকটা রক ব্যান্ড’-এর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে কনসার্টের। তারপর একে একে কার্নিভ্যাল, মেঘদল, অ্যাভয়েড রাফার গানে হারিয়ে যায় উপস্থিত জনতা। কার্নিভালের ‘সেইসব দিনরাত্রি’, মেঘদলের ‘এ হাওয়া’ আর অ্যাভয়েড রাফার গাওয়া ‘আনমনে’ গান শুনতে শুনতে কনসার্ট কখন যে জমে গেছে, টের পাওয়া যায়নি। ‘লালন’ ব্যান্ডের গানে আরেকবার উল্লাসে মেতে ওঠার পর দর্শকের সামনে আসে ‘ক্রিপ্টিক ফেইট’। এর মাঝে অবশ্য পরিবেশিত হয় একটি দলীয় নৃত্য এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অবিসংবাদিত সেই ভাষণ।
ততক্ষণে জ্যাম ঠেলে, পায়ে হেঁটে ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ছাত্র-তরুণের ঢলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে স্টেডিয়াম। ক্রিপ্টিক ফেইটের ‘ভবঘুরে’, ‘আক্রমণ’ গানের রেশ কাটতে না কাটতেই মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয় নেমেসিস। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রের গান ‘মাগো ভাবনা কেন’-এর সঙ্গে সঙ্গে আকাশে আতশবাজির বর্ণিল আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় সবার। ‘গণজোয়ার’, ‘কবে’-এর মতো জনপ্রিয় গানগুলোয় সবাইকে মাতিয়ে বিদায় নেয় তারা। এরপর চিরকুটের ‘কানামাছি’, ‘জাদুর শহর’, ‘আহা জীবন’-এ গানে বুঁদ হন দর্শক–শ্রোতারা।
সবার শেষে মঞ্চে ওঠে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল। ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’-এর মতো রক্তে ঢেউ তোলা গানের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের নতুন অ্যালবাম ‘অতৃতীয়’ থেকে গান শোনায় তারা। এর মাঝে ‘অনিকেত প্রান্তর’ গেয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে সবাইকে।
জমকালো জয় বাংলা কনসার্ট তখন পর্দা নামার অপেক্ষায়। তার আগে ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে একবার ‘দুঃখ বিলাস’ করে নেন আর্টসেলের ভোকালিস্ট লিংকন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ততক্ষণে আবারও এক বছরের অপেক্ষার শুরু!