‘এক্স-মেন’–এর দুনিয়া

ষাটের দশকের শুরুর দিকের কথা। স্ট্যান লি আর জ্যাক কার্বি জুটি তত দিনের বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। যে চরিত্র তৈরি করেন, সেটাই জয় করে নেয় মানুষের মন। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৩ সালে স্ট্যান লি তৈরি করেন নতুন একটি কমিকস—‘এক্স-মেন’।

‘এক্স-মেন’–এর শুরুর গল্পটা বেশ মজার। নিত্যনতুন সুপারহিরোদের অরিজিন লিখতে লিখতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন লি। ইচ্ছা ছিল এমন কিছু চরিত্র তৈরি করা, যাদের অরিজিন নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে হবে না। পরবর্তী সময়ে এক সাক্ষাৎকারে লি ও কার্বি দুজনেই স্বীকার করেছেন, প্রত্যেক সুপারহিরোর জন্য আলাদা আলাদা অরিজিন স্টোরি লিখতে লিখতে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। সেই বিরক্তি থেকেই জন্ম হয় মিউট্যান্টদের। তাদের সুপারপাওয়ার আসে শরীরে থাকা অতিরিক্ত এক্স-জিন থেকে। এক্স-জিনের কারণে জীবনের কোনো একপর্যায়ে সুপারপাওয়ার লাভ করে মিউট্যান্টরা।

ব্ল্যাক রাইটস মুভমেন্টের দুই নেতা মার্টিন লুথার কিং (বামে) ও ম্যালকম এক্স (ডানে)

শুরুটা বিরক্তি দিয়ে হলেও চরিত্রের রূপায়ণে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লি-কার্বি জুটি। ‘এক্স-মেন’–এর প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বঞ্চনার ইতিহাস। কমিকসজুড়ে তখনো সাদাদের আধিপত্য, দু-একটা কালো চরিত্র দেখা যেত কালেভদ্রে। ‘এক্স-মেন’ কমিকসের প্লট লেখা হয়েছিল কালোদের অধিকার আদায়কে কেন্দ্র করে। ষাটের দশকের আমেরিকা ছিল বর্ণবাদ-বৈষম্যের চূড়ান্ত প্রতীক। শুধু গায়ের রঙের জন্য প্রতি পদে পদে অবহেলিত হতে হতো আফ্রিকান-আমেরিকানদের। সে সময় ছোট ছোট করে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে ওঠে সবার মধ্যে। শুরু হয় নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াই। সেই সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য নেতা হয়ে ওঠেন মার্টিন লুথার কিং ও ম্যালকম এক্স।

দুজনের লক্ষ্য এক হলেও চিন্তাধারা, সংগ্রামের ধরন, এমনকি অধিকার আদায়ের পন্থাও ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। মার্টিন লুথার কিং ছিলেন সম-অধিকারে বিশ্বাসী, শান্তিতে বিশ্বাসী। তাঁর ধারণা ছিল, শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অধিকার ও দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরলে হয়তো মানুষও সহজেই মেনে নেবে। যে দেশ দাসত্বকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে, সেই দেশ নিশ্চয় মেনে নেবে সমান অধিকারের দাবি। ম্যালকম এক্স ছিলেন ঠিক উল্টোপথের সারথি। তাঁর মতে, অধিকার আদায়ের একটাই উপায়ই খোলা আছে তাদের সামনে—সশস্ত্র আন্দোলন। ভিন্ন মতাদর্শের ভিন্ন দুজন মানুষের লড়াইয়ের লক্ষ্য ছিল এক—নিজের মতো করে বাঁচা। অসম এক সমাজে মানুষ হিসেবে নিজেদের সম্মান, নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার এক অদ্ভুত লড়াই লড়েছেন দুজনে। ‘এক্স-মেন’–এর প্রধান দুই চরিত্র প্রফেসর এক্স ও ম্যাগনিটো ছিল মার্টিন লুথার কিং ও ম্যালকম এক্সের প্রতিরূপ। যেখানে প্রফেসর এক্সের বিশ্বাস ছিল মানুষ ও মিউট্যান্টদের সম-অধিকার ও শান্তিতে, আর ম্যাগনিটোর অধিকার আদায়ের লড়াই ছিল সশস্ত্র।

১৯৬৩ সালে প্রকাশ পায় প্রথম এক্স-মেন কমিকস

মিউট্যান্টদের গল্প যেন ষাটের দশকে প্রতিটি অবহেলিত কালো মানুষেরই গল্প। শুধু গায়ের রঙের কারণে প্রতি পদে পদে অবহেলিত, বঞ্চিত হতে হতো তাদের। আর কমিকসের পাতায় সাধারণ মানুষের চেয়ে ভিন্ন এক্স-জিন নিয়ে বেড়ে ওঠা প্রতিটি মিউট্যান্টকে হতে হয়েছে অবহেলার শিকার। কাউকে সমাজ থেকে করা হয়েছে নির্বাসিত, কারও মা-বাবা ছেড়ে গিয়েছেন তাঁর নিজের সন্তানকে। কেউ কেউ নিজেই দূরে সরে গিয়েছেন সবার ক্ষতি করার ভয়ে। এই অবহেলিত মিউট্যান্টদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রফেসর এক্স ও ম্যাগনিটো। মিউট্যান্টদের সুরক্ষা দিতে নিজের বাসাকে পরিণত করেছিলেন স্কুলে। অন্যদিকে মিউট্যান্টদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন ম্যাগনিটো। নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য নিজেদেরই এগিয়ে আসতে হবে, এমন ভাবনা থেকে গড়ে তুলেছিলেন নিজের মিউট্যান্ট বাহিনী।

প্রতিটি পদে পদে বঞ্চিত হওয়া মার্কিনরা তাই নিজেদের খুঁজে পেয়েছিল মিউট্যান্টদের মধ্যে। অধিকার আদায়ের গল্প বলায় সাধারণ মার্কিনদের কাছে খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না ‘এক্স-মেন’। কিন্তু সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির কাছে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মিউট্যান্টরা। প্রকাশের দুই দশকের মধ্যে মার্ভেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় কমিকস সিরিজ হয়ে ওঠে ‘এক্স-মেন’। তাই তো নব্বই দশকের শুরুতে যখন নিজেদের চরিত্রের মুভি স্বত্ব বিক্রি করা শুরু করে মার্ভেল, তখন প্রথম সুযোগেই ‘এক্স-মেন’কে বগলদাবা করে ফক্স। ১৯৯৪ সালে মার্ভেলের কাছ থেকে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ‘এক্স-মেন’ ও ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ সিরিজের মুভি স্বত্ব কিনে নেয় ফক্স। শুরু হয় মিউট্যান্টদের বঞ্চনার গল্প বড় পর্দায় তুলে আনার লড়াই।

শুরু থেকেই ফক্সের ইচ্ছা ছিল ‘এক্স-মেন’কে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তৈরি করার। সে কারণেই ‘এক্স-মেন’ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দ্য ইউজুয়াল সাসপেক্টসখ্যাত পরিচালক ব্রায়ান সিঙ্গারের হাতে। অ্যাকশন ও সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পরিচালকের হাতেই এক্স-মেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মানানসই হবে, এমন ভাবনা ছিল ফক্সের। ব্রায়ানের সঙ্গে তাই ব্যাটে-বলে ভালোই মিলেছিল তাঁদের। ব্রায়ান জানতেন, ‘এক্স-মেন’-এর মতো সমাজ ও রাজনীতিসচেতন চরিত্রদের বড় পর্দায় তুলে আনতে চাইলে প্রয়োজন সেই মাপের অভিনেতার। চরিত্রের জন্য শুরু হলো অভিনেতা খোঁজা। প্রফেসর এক্স ও ম্যাগনিটো চরিত্রের জন্য প্রথম পছন্দ ছিলেন প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট ও ইয়ান ম্যাককেলেন। ব্রিটিশ দুই অভিনেতাকে পাওয়ার জন্য ‘এক্স-মেন’-এর শুটিং পিছিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেননি তিনি। ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ সিনেমার সঙ্গে শিডিউল মিলে যাওয়ায় ম্যাগনিটো চরিত্রটি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন ইয়ান ম্যাককেলেন। কিন্তু হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা চরিত্রটির জন্য মানানসই ছিলেন তিনি।

বিশাল তারকাবহর নিয়ে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ছয় মাস পর শুরু হয় ‘এক্স-মেন’-এর শুটিং। নব্বইয়ের দশকের পর্দাকাঁপানো তারকাদের ভিড় ছিল শুটিং সেটে। ফামকে জ্যানসেন, হ্যালি বেরি, অ্যানা প্যাকুইন থেকে শুরু করে জেমস মার্সডেন, রোবেকা রেমজিন। তাঁদের মধ্যে উলভারিন চরিত্রের জন্য ব্রায়ানের পছন্দ ছিল ২১ বছর বয়সী এক অস্ট্রেলীয় তরুণ, নাম তাঁর হিউ জ্যাকম্যান।

এই দৃশ্যের শ্যুটিংয়ের আগে অভিনেতাদের কেউই কখনও দাবা খেলেননি

কমিকবুকের চরিত্রগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি অভিনেতাদের। মিস্টিক চরিত্রকে প্রাণ দিতে মডেল রোবেকা রেমজিনকে প্রতিদিন মোট আট ঘণ্টা মেকআপ নিয়ে চেয়ারে বসে থাকতে হয়েছে। তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরোটা ঢেকে দেওয়া হলো নীল রঙে। প্রফেসর এক্স ও ম্যাগনিটোর মধ্যকার বিখ্যাত দাবা খেলার দৃশ্যটি ধারণ করতে উড়িয়ে আনা হয়েছিল একজন পেশাদার গ্র্যান্ডমাস্টারকে। এই দৃশ্যের শুটিংয়ের আগে অভিনেতাদের কেউই কখনো দাবা খেলেননি। পর্দায় দাবা খেলার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে দাবা খেলা শেখেন প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট ও ইয়ান ম্যাককেলেন। এতটাই দাবার পাগল হয়ে যান যে সেটে একটু বিরতি পেলেই দাবা খেলতে বসে যেতেন দুজন।

বহু কাঠখড় পোড়ানোর পর নতুন শতকে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন’। ‘এক্স-মেন’ ছিল এক নতুন যুগের সূচনা। ষাটের দশকে যে কালোদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছিল ‘এক্স-মেন’-এর গল্প, সেটাই ফুটে উঠেছিল মুভির প্রতিটি দৃশ্যে। ‘এক্স-মেন’ শুধু মিউট্যান্টদের গল্পই তুলে আনেনি, বরং বদলে দিয়েছিল সুপারহিরো জনরার ধরনও। সুপারহিরো মুভি মানেই যে শুধু মারমার-কাটকাট অ্যাকশন নয়, বরং এর মধ্যেও যে লুকিয়ে থাকতে পারে আশা-নিরাশা, হতাশা-আনন্দ, যুদ্ধ ও শান্তির গল্প, তার প্রমাণ ‘এক্স-মেন’। পর্দায় মিউট্যান্টদের আগমন বদলে দেয় সিনেমাজগতের ইতিহাস।

বছর দুই পরে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন’-এর সিকুয়েল। প্রথম মুভির গল্পকে আরও এক ধাপ ওপরে নিয়ে যায় ‘এক্স-টু’। ২০০৬ সালে ‘এক্স-মেন: দ্য লাস্ট স্ট্যান্ড’ মুভির মাধ্যমে পর্দা নামে ‘এক্স-মেন অরিজিনাল ট্রিলজি’র। সব সমস্যার সূচনা এখান থেকেই।

পর্দায় দাবা খেলার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে দাবা খেলা শেখেন প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট ও ইয়ান ম্যাককেলেন। এতটাই দাবার পাগল হয়ে যান যে সেটে একটু বিরতি পেলেই দাবা খেলতে বসে যেতেন দুজন।

‘কীভাবে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি তৈরি করবেন না’—এই বিষয়ক যদি কোনো লেখা হয়, তবে তার প্রথম উদাহরণ হবে ফক্স এক্স-মেন ফ্র্যাঞ্চাইজি। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের গল্প যেমন লিনিয়ার গতিতে এগিয়েছে, ফক্স ‘এক্স-মেন ইউনিভার্স’–এর গল্পটা সেভাবে এগোয়নি। নন-লিনিয়ার ধারায় বলা গল্পের কারণে অনেকেই ‘এক্স-মেন ইউনিভার্স’–এর গল্প ঠিকভাবে ধরতে পারে না। একই চরিত্রে দুই বা ততোধিক অভিনেতার অভিনয় করা, এক গল্প থেকে অন্য গল্পে ঝাঁপ দেওয়া, দুই সিনেমার মধ্যে থাকা টাইম গ্যাপ—এসব নিয়ে আছে বেশ বিভ্রান্তি।

২০০৯ সালে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন অরিজিনস: উলভারিন’, যা মূলত উলভারিনের অরিজিন স্টোরি। তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, আমেরিকার ইতিহাসের সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়ে ফেলার ইতিহাস—এসব উঠে এসেছে সিনেমার গল্পে। ২০১১ সালে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস’, যা ছিল ‘এক্স-মেন’-এর মূল দুই চরিত্র প্রফেসর চার্লস জাভিয়ের ও ম্যাগনিটোর অরিজিন স্টোরি, যেখানে তরুণ প্রফেসর এক্স ও ম্যাগনিটো চরিত্রে অভিনয় করেন জেমস ম্যাকঅ্যাভয় ও মাইকেল ফ্যাসবেন্ডার। কেন প্রভাব-প্রতিপত্তির ভেতরে বড় হওয়া চার্লস আর নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বড় হওয়া এরিক ল্যাংশেয়ার সম্পূর্ণ ভিন্ন মনোভাবের দুজন মানুষ? ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন দুই জগতে বেড়ে ওঠা দুজন কেন একই লক্ষ্য পূরণে সম্পূর্ণ দুটি আলাদা পথ বেছে নিয়েছে, তার উত্তর ছিল ‘এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস’ মুভিতে। উলভারিনের অরিজিন স্টোরির অংশবিশেষ নিয়ে ২০১৩ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য উলভারিন’।

এক্স-মেন: ডেইজ অফ ফিউচার পাস্ট সিনেমার গল্প মূলত এগিয়েছে টাইম ট্রাভেলকে কেন্দ্র করে

‘এক্স-মেন’ কমিকসের অন্যতম বিখ্যাত স্টোরিলাইন ‘ডেজ অব ফিউচার ফাস্ট’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৪ সালে মুক্তি পায় ‘এক্স-মেন: ডেজ অব ফিউচার পাস্ট’। এক্স-মেন ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে যত বিভ্রান্তি, যত মাথাব্যথা—সবকিছুর সূচনা এ মুভি থেকেই। মুভির গল্প মূলত এগিয়েছে টাইম ট্রাভেলকে কেন্দ্র করে। অদূর ভবিষ্যতে সেন্টিনেলদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে মিউট্যান্টরা। নিজেদের বিনাশ রুখতে একটা উপায়ই খোলা ছিল তাদের কাছে—টাইম ট্রাভেল। ইতিহাসের অন্যতম বড় একটি ঘটনা রুখতে উলভারিনকে ফেরত পাঠানো হয় ১৯৭৩ সালে। মিউট্যান্টদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মিশনের সফলতার ওপর।

এ মুভি দিয়ে ‘এক্স-মেন অরিজিনাল ট্রিলজি’, ‘উলভারিন ডুয়োলজি’ মুছে যায় টাইমলাইন থেকে। নতুন টাইমলাইনের অংশ হিসেবে টিকে থাকে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস’। নতুন অভিনেতাদের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন করে শুরু হয় ‘এক্স-মেন’-এর যাত্রা। পরিবর্তিত টাইমলাইনের অংশ হিসেবে ‘এক্স-মেন: অ্যাপোকলিপস’ (২০১৬), ‘এক্স-মেন: ডার্ক ফিনিক্স’ (২০১৯) ও ‘নিউ মিউট্যান্টস’ (২০২০)।

এক্স-মেন টাইমলাইন

২০১৬ সালে বড় পর্দায় অভিষেক হয় ফোর্থ ওয়াল ব্রেকিং অ্যান্টিহিরো ডেডপুলের। অফিশিয়ালি ‘এক্স-মেন’-এর কোনো টাইমলাইনের সঙ্গে ‘ডেডপুল’কে যুক্ত করা হয় না। নিজের বানানো জগতে মুক্তবিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ায় সে। তবে ‘ডেডপুল–২’ সিনেমায় ‘এক্স-মেন’-এর নতুন টাইমলাইনের কিছু পূর্বাভাস পাওয়া যায়। অফিশিয়ালি নিশ্চিত না হলেও ‘ডেডপুল’কে নতুন টাইমলাইনের অংশ হিসেবেই ধরা হয়।

সুপারহিরো মুভির যে টেম্পলেট তৈরি হয়েছিল ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘এক্স-মেন’-এর হাত ধরে, ১৭ বছর পর সেই টেম্পলেটকে ভেঙে নতুন জনরা শুরু করল ‘লোগান’। ‘লোগান’ কোনো গতানুগতিক সুপারহিরো মুভি নয়। এর সঙ্গে বাকি ‘এক্স-মেন’ টাইমলাইনের কোনো মিল নেই। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক টাইমলাইনে গড়ে উঠেছে ‘লোগান’-এর গল্প, যেখানে মিউট্যান্টরা সুদূর অতীত, কমিকস বুকের অংশমাত্র; যেখানে নিজের শক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা প্রফেসর এক্সকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত বৃদ্ধ উলভারিন; যেখানে সবাইকে হারিয়ে চার্লস আর লোগান নিঃসঙ্গ, বড্ড একা। মিউট্যান্টদের শেষ প্রতিচিহ্ন হয়ে বেঁচে আছে শুধু লোগান।

মিস্টিক চরিত্রকে প্রাণ দিতে মডেল রোবেকা রেমজিনকে প্রতিদিন মোট আট ঘণ্টা মেকআপ নিয়ে চেয়ারে বসে থাকতে হয়েছে।

মিউট্যান্টের বিলুপ্তির গল্পকেই ‘এক্স-মেন ইউনিভার্স’–এরসমাপ্তি হিসেবে ধরে নেন অনেকে। অনেকের কাছে যে ‘এক্স-মেন ইউনিভার্স’–এর গল্প শুরু হয়েছিল লোগানের দ্বারা, সেই ইউনিভার্সের শেষটাও টানা হয়েছে লোগানের মৃত্যু দিয়েই। ২০০০ সালে এক্স-মেনের সদস্য হতে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমেরিকায় পা দিয়েছিলেন হিউ জ্যাকম্যান, তখন তাঁর চারপাশে ছিল হাজারো রথী-মহারথীর বসবাস। ১৭ বছর পর দর্শকদের কাছে সেই ফ্র্যাঞ্চাইজির আক্ষরিক মৃত্যুও ঘটে তার চরিত্রের মৃত্যু দিয়েই।

২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সকে কিনে নেয় ডিজনি। সেই সঙ্গে ইতি টানা হয় ফক্স এক্স-মেনের ফ্র্যাঞ্চাইজির। ‘এক্স-মেন’ এখন মার্ভেলের অংশ, এমসিইউতে তাদের দেখা পাওয়া সময়ের ব্যাপারমাত্র। নন-লিনিয়ার স্টোরিলাইন, বারবার অভিনেতাদের পরিবর্তন কিংবা বিশাল টাইম গ্যাপ; ‘এক্স-মেন ইউনিভার্স’–এ লুপহোল ছিল প্রচুর। কিন্তু আজকের সুপারহিরোর জগতের রমরমা ব্যবসার পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে প্রথম ‘এক্স-মেন’ মুভির ওপর। ফক্স এক্স-মেন ফ্র্যাঞ্চাইজির ইতি হয়তো টানা হয়েছে, কিন্তু যত দিন সুপারহিরো জনরা বেঁচে থাকবে, সগর্বে বেঁচে থাকবে ফক্স এক্স-মেন ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম।