সবাইকে বিহ্বল করে দিয়ে অমরত্বের পথে পা বাড়িয়েছেন সারাহ ইসলাম। এখানে ‘বিহ্বল’ শব্দটা ব্যবহার করার কারণ আছে। মৃত্যু আমাদের শোকাহত করে। বিষণ্ন হওয়াটাই তাই স্বাভাবিক। কিন্তু গর্বও অনুভব করলে একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন রকমের অনুভূতির মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারটাকে কি বিহ্বলতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়?
এমন দ্বিধার দেখা পাচ্ছিলাম ডা. হাবিবুর রহমানের অভিজ্ঞতা শুনতে গিয়ে। তিনি বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান। স্বাধীন বাংলাদেশে তো বটেই; পূর্ব পাকিস্তান, এমনকি ব্রিটিশ উপনিবেশের সময়েও যে অপারেশন হয়নি, সেটির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তির দেহ থেকে চোখ, কিডনি অপসারণ করে তা অন্যজনের দেহে প্রতিস্থাপনের ঘটনা দেশে প্রথমবারের মতো ঘটল। দাতা একজন সারাহ ইসলাম। গ্রহীতা চারজন।
জানুয়ারি মাসের কিআড্ডায় এসেছিলেন ডা. হাবিবুর রহমান। শুনিয়েছেন সেই অপারেশনের আদ্যোপান্ত। যে অস্ত্রোপচারের কথা তিনি শুধু থিওরি আকারেই জানতেন, সফলভাবে সেটি করতে পারায় গর্বের ছাপ ছিল তাঁর চোখেমুখে। তা মুছে যেতে অবশ্য বেশি সময় নেয়নি। সারাহর সাহসিকতার কথা বলতে গিয়ে তাঁর কণ্ঠ হয়ে উঠেছিল আর্দ্র। টিউবেরাস স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত ছিলেন সারাহ। রোগটা ভীষণ জটিল ও বিরল। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনে তিনি হতোদ্যম হয়ে পড়েননি। জীবনটাকে উপভোগের চেষ্টা করেছেন। চেয়েছেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে। সারাহর মা বলেন, ‘মৃত্যুর আগে ও দেহের সবকিছুই দান করে দিতে বলেছে। তবে তাঁর কিডনি ও কর্নিয়া নেওয়া হয়েছে। সারাহকে বীরের মর্যাদা দেওয়া উচিত। মরণোত্তর কিডনি দানে উদ্বুদ্ধ করতে এই দান মানুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
সত্যিই তা–ই। সারাহর উৎসর্গে উপকৃত হয়েছেন দুজন দৃষ্টিহীন, যাঁদের একজন জন্মান্ধ; দুজন অসুস্থ, যাঁদের কিডনি প্রয়োজন। স্যালুট, সারাহ ইসলাম মৃত্যুও এমন সুন্দর হতে পারে! মনে পড়ছে সৈয়দ শামসুল হকের পঙ্ক্তি—
এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর।
পরানের গহিনে জায়গা করে নেওয়া জাদুকর সারাহকে অভিবাদন!