বিশ্ব রোবট অলিম্পিয়াডে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশের দল ‘লেইজি গো’। বাংলাদেশের আরেক ‘রোবনিয়াম বাংলাদেশ’ হয়েছে অষ্টম।
এ বছরই প্রথমবারের মতো বিশ্ব রোবট অলিম্পিয়াডে সরাসরি অংশ নেয় বাংলাদেশ। জার্মানির ডর্টমুন্ডে আয়োজিত হয় বিশ্ব রোবট অলিম্পিয়াডের ২৪তম আসর। ১৭-১৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। বাংলাদেশ থেকে দুটি দল অংশগ্রহণ করে বৈশ্বিক এ আয়োজনে। দুই দলে দুজন করে মোট চারজন সদস্য ছিলেন। তাঁদের দলনেতা হিসেবে ছিলেন আরও দুজন।
বিশ্ব রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২-এ ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার্স ক্যাটাগরিতে ‘লেইজি-গো’ অর্জন করে তৃতীয় স্থান। বিশ্বের ২৪টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তারা অর্জন করে এ সফলতা। এই ক্যাটাগরিতে প্রথম হওয়া চীনের দলটির পয়েন্ট ছিল ৭৫। দ্বিতীয় হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দলের পয়েন্ট ৭৪। বাংলাদেশের ‘লেইজি গো’ দলের পয়েন্ট ৭৩। একটুর জন্য অধরা রয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব। ‘লেইজি গো’ দলে প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবাল সামিন ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তওসিফ সামিন।
অন্যদিকে ফিউচার ইনোভেটরস ক্যাটাগরিতে ‘রোবনিয়াম বাংলাদেশ’ ৩২ দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে হয়েছে অষ্টম। তাদের দলের দুই সদস্য হলেন রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ইসরাফিল শাহীন এবং মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মীর মুহাম্মদ আবিদুল হক। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে এই দুটি দলের জন্য দলনেতা হিসেবে ছিলেন রেদওয়ান ফেরদৌস এবং উপ-দলনেতা মাহেরুল আজম কোরেশী।
সারা বিশ্বের ৭৩ দেশের ৩৭৫টি দলের প্রায় এক হাজার তিন শতাধিক প্রতিযোগী এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দলের উপ-দলনেতা মাহেরুল আজম বলেন, ‘আমাদের পথচলাটা সহজ ছিল না। অনেক কষ্টে এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় আমরা এখানে আসতে পেরেছি। প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলেরা প্রথম দুই রাউন্ডে সবার ওপরেই ছিল। কিন্তু ফাইনাল রাউন্ডে আমরা পিছিয়ে যাই। ছেলেরা হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাদের সব সময় বলেছি, যা–ই হোক না কেন, আমরা শেষটা দেখতে চাই।’
‘লেইজি গো’ দল যে বোর্ড ব্যবহার করেছে, সেটা ডিজাইন হয়েছে বাংলাদেশেই। বোর্ডটির নাম জেআরসি বোর্ড। আগামী দিনের রোবোটিকস এবং আইওটিকে (ইন্টারনেট অব থিংস) মাথায় রেখেই এ ধরনের ডিজাইন করা হয়েছে। এ বোর্ডে যোগাযোগের জন্য আলাদাভাবে ওয়াই–ফাই ও ব্লুটুথের প্রয়োজন হয় না। বোর্ডটির নাম দিয়েছিলেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী। সেই বোর্ড ব্যবহার করেই সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে বাংলাদেশ।
‘লেইজি-গো’ দলের সদস্য ইকবাল সামিন বলেন, ‘বাংলাদেশে রোবট তৈরি থেকে শুরু করে জার্মানির ভিসা পাওয়া পর্যন্ত অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, জাতীয় আয়োজকেরা এবং জার্মান প্রবাসীদের সহযোগিতার ফসল আজকের এই পুরস্কার।’
বিশ্ব রোবট অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন করে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, ‘২০২০ সালে আমরা বিশ্ব রোবট অলিম্পিয়াডের সদস্য হয়েছি। সেবার প্রতিযোগিতার আসর বসেনি। ২০২১ সালে অনলাইনে অনুষ্ঠিত আসরে প্রথমবার অংশ নিয়ে ৬৬টি দেশের ২০০টি দলের মধ্যে দশম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। এ বছরের আয়োজনে সশরীরে বিশ্বের ৭৩টি দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমাদের দেশের ছেলেরা।’
২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় দেশের মাটিতে পা রাখে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজয়ী এই দল। এর আগে গত অক্টোবরে রাজধানীর আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২–বাংলাদেশের জাতীয় পর্ব। জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক দল নির্বাচনী ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্পের সাফল্য এবং পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে ‘ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২’-এ বাংলাদেশ দল নির্বাচন করা হয়।
এ বছর ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগীরা নিজেদের খরচেই অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতা করছে জেআরসি বোর্ড এবং ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট।