কলকাতা সাহিত্য সমাজে লোকটা বিশুদা নামে পরিচিত। ভদ্রলোক একদিন ওষুধ কিনতে গেছেন দেবপ্রিয় পার্কের আছে। ওষুধটার জন্য পুরো কলকাতা চষে ফেলেছেন, কিন্তু মেলেনি। দেবপ্রিয় পার্কের এক দোকানে পাওয়া গেল। কিন্তু বানাতে সময় লাগবে। বিশুদা অপেক্ষা করলেন। কিন্তু দোকানি লোকটার ব্যবসায়ে মন নেই। বই পড়ছেন একমনে। শরৎচন্দ্রের বিপ্রদাস। পড়া নয়, রীতিমতো গিলছেন বইটি। তাই ভরদুপুরে ক্রেতা আগমনে বিরক্ত হলেন। বিরক্তিভরেই কম্পাউন্ডারকে বললেন ওষুধটা তৈরি করে দিতে।
ঠিক তখনই এক প্রৌঢ়, দীর্ঘদেহী লোক এলেন ওষুধ কিনতে। দোকানি এবার যারপরনাই বিরক্ত। প্রৌঢ় ভদ্রলোককে দুকথা শুনিয়েও দিলেন। তারপর কম্পাউন্ডারকে ডেকে তাঁর ওষুধটা দিতে বললেন। এতক্ষণ একপলকের জন্যও লোকটার মুখের দিকে তাকাননি দোকানি। টাকাও দেওয়ার সময় বিরক্তিভরে তাকালেন ভদ্রলোকের দিকে এবং চমকে উঠলেন। মুখ খুললেন দোকানি, ‘মশাই, আপনাকে দেখতে অনেকটা শরৎচন্দ্রের মতো লাগছে।’
ক্রেতাও সপ্রতিভ উত্তর দিলেন, ‘অনেকেই তা-ই বলে বটে।’
আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন দোকানি। ক্রেতাও ওষুধটষুধ নিয়ে ফিরে গেলেন যেদিক থেকে এসেছিলেন, সেদিকে। বিশুদা এতক্ষণে চুপচাপ মজা দেখছিলেন। শরৎচন্দ্রকে তিনি চিনতেন ভালোমতোই। সুতরাং একটু মজা করার কথা মাথায় এল। দোকানিকে বললেন, ‘আপনি ঠিকই ধরেছিলেন মশাই। তবে একটু ভুল হয়েছে। ওনার চেহারা শরৎচন্দ্রের মতো নয়, উনি আসলেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। যাঁর বই আপনি এত মন দিয়ে পড়ছেন।’
অবশেষে দোকানির হুঁশ হলো। কোনো দিকে না তাকিয়ে পাগলের মতো ছুটলেন রাস্তার দিকে। অসাবধানে ফেলে দিলেন টেবিলের ওপর রাখা দামি কাচের জিনিসপত্র। কিন্তু লাভ হলো না। উনি যতক্ষণে রাস্তায় নেমেছেন, ততক্ষণে কোন গলিতে মিলিয়ে গেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।