গোলটেবিল বৈঠক
জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্যবিষয়ক কৌশলপত্র: বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়
আরএইচস্টেপ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্যবিষয়ক কৌশলপত্র (২০১৭-২০৩০): বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩। আলোচনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে ছাপা হলো।
অংশগ্রহণকারী
নুরুন নাহার বেগম
লাইন ডিরেক্টর, ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রোগ্রাম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
কাজী সুরাইয়া সুলতানা
নির্বাহী পরিচালক, আরএইচস্টেপ
মো. মনজুর হোসেন
প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এঅ্যান্ডআরএইচ), এমসিএইচ সার্ভিসেস ইউনিট, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
নন্দলাল সূত্রধর
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, জাতীয় পুষ্টিসেবা
ফারিহা হাসিন
সহযোগী অধ্যাপক, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, বিএসএমএমইউ
মো. জহিরুল ইসলাম
সিনিয়র হেলথ অ্যাডভাইজার, উন্নয়ন সহযোগী শাখা, সুইডিশ দূতাবাস, ঢাকা
মাশফিকা জামান সাটিয়ার
সিনিয়র অ্যাডভাইজার (এসআরএইচআর অ্যান্ড জেন্ডার), ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস
মুহম্মদ মুনির হোসেন
প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট-অ্যাডলসেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ
ফাতেমা শবনম
কিশোর-কিশোরী ও যুববিশেষজ্ঞ, ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল
মো. মাসুদুর রহমান
জাতীয় সমন্বয়ক, আরএইচআরএন-২, ব্র্যাক
এলভিনা মোস্তারী
উপপরিচালক (প্রোগ্রাম), আরএইচস্টেপ পর্যবেক্ষক
পর্যবেক্ষক
শাশ্বতী বিপ্লব
প্রোগ্রাম হেড, এসইএলপি (সেল্প) প্রকল্প, ব্র্যাক
নাজিয়া জেবিন
নির্বাহী পরিচালক, অবয়ব
জয়িতা হোসেন
প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, আরএইচআরএন-২ নাগরিক উদ্যোগ
শারমিন কবির
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঋতু
শামীমা চৌধুরী
সাবেক পরামর্শক, ইউনিসেফ
শামায়লা মাহবুব
প্রজেক্ট লিড, আরএইচআরএন-২-প্রকল্প, ওয়াইপিএফ
মো. মাহবুবুল হক
পরিচালক (প্রোগ্রাম), আরএইচস্টেপ
সূচনা বক্তব্য
আব্দুল কাইয়ুম
সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সঞ্চালনা
ফিরোজ চৌধুরী
সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
কৈশোর স্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে মানসিক বিকাশ হবে। তারা ভালো নাগরিক হয়ে বেড়ে উঠবে। দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। এ জন্য প্রয়োজন তাদের পুষ্টিকর খাদ্য, খেলাধুলা, সুস্থ বিনোদন। এ সময় কিশোর–কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয়। এ ক্ষেত্রে যদি আমরা যত্নশীল হতে পারি, তাহলে কৈশোর স্বাস্থ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
মো. মাসুদুর রহমান
আরএইচআরএন-২ প্রকল্প বাংলাদেশে প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। ২০২১ সালে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ধাপ। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো তরুণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন। যেন তারা তাদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য উপভোগ করতে পারে।
আমরা সাতটি সহযোগী সংগঠন নিয়ে কাজ করছি। এদের মধ্যে রয়েছে আরএইচস্টেপ, নারীপক্ষ, নাগরিক উদ্যোগ, ব্র্যাক ও তিনটি ইয়ুথ লিড পার্টনার অবয়ব, ইয়ুথ লিড সংগঠন, পলিসি ফোরাম ও ঋতু। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্প চলবে।
আমরা ২৫টি জেলায় প্রায় ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কাজের মধ্যে রয়েছে তরুণ-তরুণীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন স্কুলে আমরা কাজ করি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে কাজ করি। এ ছাড়া ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, বাপ্সা, পিএসটিসিসহ অন্য যারা কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করি। সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আমরা কাজ করি। আরও ১০টি দেশে এই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে।
বাংলাদেশে এর প্রধান সহযোগী হচ্ছে মিনিস্ট্রি অব নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশে আমরা ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাজ করব। ভবিষ্যতেও আপনাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হবে। আমরা আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই।
মো. মনজুর হোসেন
‘১০ থেকে ১৯–এ আমরা তোমার পাশে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের আরও ১৭টি মন্ত্রণালয় সারা বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫ ভাগের ১ ভাগ কিশোর-কিশোরী। তাদের প্রতি সহিংসতা রোধ ও তাদের প্রজননস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি। ২০১৭ সালে এম্বাসি অব দ্য কিংডম অব নেদারল্যান্ডস, ইউনিসেফ ও অন্যদের সহযোগিতায় আমরা একটি কৌশলপত্র রচনা করেছিলাম। এ কৌশলপত্রের মধ্যে আমাদের চারটি থিমেটিক এরিয়া, দুটি ক্রসকাটিং ইস্যু ও একটি বিশেষ ইস্যু ছিল। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শারীরিকভাবে অক্ষম কিশোর-কিশোরী আছে, তাদের জন্য আমাদের করণীয় কী, সেটাও আমাদের কৌশলপত্রে ছিল।
এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে কেন আমরা এত শঙ্কিত। এদের প্রায় ৫০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগে। আবার ১৮ বছরের আগে অনেকে গর্ভধারণ করেছে। আমরা প্রায় সবাই জানি এর ফলাফল কী হতে পারে। মাতৃমৃত্যুর ৪০ শতাংশ হয় এ দুটি কারণে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীদের পরিবার পরিকল্পনা উপকরণের চাহিদা ১৭ শতাংশ।
এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীদের শুধু আমরাই যে গুরুত্ব দিচ্ছি তা নয়, সারা পৃথিবী তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে।
আমাদের ১ হাজার ২৫৩টি সেবাকেন্দ্রে ছোট পরিসরে হলেও কিশোর-কিশোরীদের সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে সব সময় সব ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের স্যাটেলাইট ক্লিনিক, পরিবার পরিকল্পনা সেবাকেন্দ্র, অ্যাডলসেন্ট ক্লাব, কমিউনিটি ক্লিনিক, এমনকি পোশাকশিল্প; যেখানে কিশোর–কিশোরীরা কাজ করে, সেখানেও সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মুহম্মদ মুনির হোসেন
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পরিবার পরিকল্পনা কাজের মধ্য দিয়ে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় প্রজননস্বাস্থ্য বলতে মূলত বিবাহিত কিশোর-কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্যের কথা বলা হতো। সে সময় বাল্যবিবাহ অনেক বেশি ছিল। অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী বিবাহিত ছিল।
নব্বইয়ের দশকে কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। তখন অনেক কিশোর-কিশোরী প্রজননস্বাস্থ্যের বাইরে চলে গেল। তখন এনজিওসহ বিভিন্ন সংগঠন যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের কার্যক্রম শুরু করে। এভাবে কাজ করতে করতে কৈশোর স্বাস্থ্যের জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি হয়েছে। এটা এক দিনে হয়নি। আমরা কিন্তু ধীরে চলছি। জনসংখ্যার যে সুবিধা, সেটা আমরা খুব বেশি দিন ধরে রাখতে পারব না। কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা যদি ঠিকভাবে দিতে না পারি, তাহলে তাদের ক্ষমতায়ন হবে না। তাদের সেবা দেওয়ার জন্য স্কুল, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে পাঠ্যক্রমেও এসেছে।
মাশফিকা জামান সাটিয়ার
নেদারল্যান্ডস দূতাবাস ২০১১ সাল থেকে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার (এসআরএইচআর) নিয়ে খুব গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। আমরাও মনে করি, এ ক্ষেত্রে আরও কাজ করা দরকার। নেদারল্যান্ডস এম্বাসির সহযোগিতায় ইউনিসেফ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরে সঙ্গে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের কৌশলপত্র তৈরি করেছে। একই সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। যে কৌশলপত্র তৈরি হয়েছে, এটা আমাদের জাতীয় কৌশলপত্র। আমরা যে যেভাবে কাজ করি না কেন, সেটা যেন এই কৌশলপত্রে অবদান রাখে।
আমাদের স্কেলেবেল কর্মসূচি নিতে হবে। কারণ, উন্নয়ন সহযোগীদের কাজ একটা পর্যায়ে এসে থেমে যায়। কয়েক বছর পর এর ফল পাওয়া যায় না। যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের কৌশলপত্রে সামগ্রিক উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো ইস্যু বাদ দেওয়া যাবে না।
কিশোর-কিশোরীদের জানতে হবে তাদের কী অধিকার রয়েছে, কোথায় যেতে হবে। হয়তো তাদের হাতের কাছে সেবাকেন্দ্র আছে অথচ তারা জানে না। তাহলে সঠিক তথ্য জানা খুবই জরুরি।
ফারিহা হাসিন
বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে ভালো গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার ফল তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টিসহ সব ক্ষেত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তবে একটি ভালো দিক হলো, আমাদের কিশোর-কিশোরীরা এখন অনেক বেশি সৃজনশীল। তারা নিজেরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায়।
আমাদের দেশে কিশোরীদের সমস্যা কিছুটা বেশি। তারা সাধারণত তাদের শারীরিক বিষয় মা-বাবা, শিক্ষক ও অন্যান্য অভিভাবকের কাছ থেকে জানতে চায় না। তারা বন্ধুর ওপর বেশি নির্ভর করে। কিন্তু বন্ধু সঠিক তথ্য জানে কি না, সেটাও একটা বিষয়। আবার মা–বাবা, চিকিৎসক, কাউন্সেলর, শিক্ষক, অভিভাবক—যাঁরা কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়ে জানাবেন, তাঁরা কীভাবে জানাবেন, সেটা নিয়ে কোনো গাইডলাইন করা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।
নন্দলাল সূত্রধর
২০১৭ সাল থেকে কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি নিয়ে কাজ করছি। তাদের পুষ্টির বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কৈশোরের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তাদের সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। মুঠোফোনের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু এ প্রযুক্তি থেকে কীভাবে ইতিবাচক তথ্য ও ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, সেটি ভেবে দেখতে হবে।
কিশোর-কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্য, পুষ্টি, বাল্যবিবাহ, স্কুল থেকে ঝরে পড়া—এসব বিষয় কৌশলপত্রে আসা প্রয়োজন।
ফাতেমা শবনম
২০১৮ সাল থেকে আমাদের কার্যক্রম চলছে। জাতীয় কৌশলপত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অপারেশনাল প্ল্যানের যে কার্যক্রম, তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। কৌশলপত্রের প্রথম কাজ ছিল যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আমরা সেবা প্রদানকারীর দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করেছি। কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। পুষ্টি নিয়ে আমরা হয়তো সরাসরি কাজ করিনি। তবে আমাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে পুষ্টির বিষয় এসেছে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করেছি। বিভিন্ন স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছি। কমিউনিটি ও এফএম রেডিওর সঙ্গে আমরা কাজ করেছি। ট্রান্সজেন্ডার, চা-বাগান ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে কাজ করেছি।
মো. জহিরুল ইসলাম
জাতীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক কৌশলপত্র হলো ১৩ বছরের স্ট্র্যাটেজি। ফলে এর মধ্যবর্তী মূল্যায়ন হওয়া দরকার। এবার আমাদের স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে ‘এস’ শব্দটি এসে এসআরএমএনসিএইচ হয়েছে। এটি একটি অগ্রগতি। ইউএনএফপিএ জেলা পর্যায়ে রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ অফিসার নিয়োগের বিষয় বিবেচনা করছে। কৈশোর স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সংগঠন কাজ করছে। কিন্তু সবার মধ্যে সমন্বয় দরকার। অপারেশনাল প্ল্যান এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অপারেশনাল প্ল্যান যতক্ষণ না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ করে যেতে হবে। ফ্যামিলি প্ল্যানিং স্ট্র্যাটেজি এখনো শেষ হওয়ার কথা নয়। আমি শেষ কথা বলব যে যতটুকু কাজ হয়েছে, সেটা গ্রহণ করতে হবে আর যেটা হয়নি, সেটা অর্জন করতে হবে।
এলভিনা মোস্তারী
আমি সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত। ২০১৭ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত স্ট্র্যাটেজি হয়েছে। ১ হাজার ২৫৩ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেখানে সেবা প্রদানকারীরা সেবাদান করছেন। আমি যখন তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে যাই, তখন এসব সেবাকেন্দ্রের অনেক সিনিয়র স্টাফের কাছে যখন জানতে চাই, তাঁরা এসআরএইচআর শব্দটি শুনেছেন কি না, তাঁরা অনেকেই বলেন যে শোনেননি। যাঁরা সেবা প্রদান করতে যান, তাঁরা হয়তো তাঁদের ঠিকভাবে বোঝাতে পারছেন না। কাউন্সেলিংয়ের জন্য একটা ভালো পরিবেশ দরকার, যেখানে কিশোর-কিশোরীরা তাদের মনের কথা বলতে পারবে।
নুরুন নাহার বেগম
গ্রাম, শহর ও দুর্গম অঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রতিটি এলাকার জন্য তাদের চাহিদামতো পরিকল্পনা নিতে হবে। ২০১৭ সালের আগে আমাদের কোনো কৌশলপত্র ছিল না। তখন বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছি। আমরা এখন কৌশলপত্রের আলোকে কাজ করছি।
আমাদের মূল্যায়ন করে দেখতে হবে, কোথায় কাজ কম হয়েছে, কোথায় বেশি। দুর্বলতাগুলো বের করতে হবে। পরবর্তী সেক্টর প্রোগ্রামে সেগুলো আনতে হবে।
দেশে কত স্কুল-মাদ্রাসা আছে। কত প্রোগ্রাম করতে হবে। কলেজেও আমরা কাজ করব কি না। সেভাবে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। দেশের সব কিশোর-কিশোরীকে যদি সেবা দিতে চাই, তাহলে আমাদের কত ব্যয় হবে, এর কোনো হিসাব নেই। কোথায় কত খরচ হবে, এ ধরনের পরিকল্পনা না থাকলে আমরা এগোতে পারব না।
শুধু সরকারের পক্ষে শতভাগ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারি–বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীদের কথা বলছি। আমি মনে করি, শিশুকে মায়ের গর্ভ থেকে জন্মের পর ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে হবে। শিশুকে শুধু খাবার দিলেই হবে না; তাকে খেলার ও বিনোদনের সুযোগ দিতে হবে।
স্কুল ও হাসপাতালে শিক্ষক ও চিকিৎসকদের টয়লেটে তালা থাকে। শিক্ষার্থীরা বা রোগীরা কোথায় যাবে, এর কোনো খবর নেই। আমরা শিশুদের অনেক বড় স্বপ্নের কথা বলি; কিন্তু মানুষ হওয়ার কথা বলি না। একজন শিশু যখন ভালো মানুষ হবে, তখন সে অনেক বড় স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
কাজী সুরাইয়া সুলতানা
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিজের ও জাতীয় জীবন সম্বন্ধে সচেতন করতে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে কত চেষ্টা চলছে, সে বিষয়ে আমরা এতক্ষণ গুণীজনদের বক্তব্য শুনলাম। এটা সত্যি, সমগ্র বিশ্ব এখন পরবর্তী প্রজন্মকে ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে দেখছে। নিজেকে জানা, জাতিকে জানা, নিজস্ব সংস্কৃতি জানা এবং তার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এসআরএইচআর ও সমন্বিত যৌনশিক্ষা সম্বন্ধে জানা। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে ভেঙে এর থেকে উত্তরণের চেষ্টা করা। সহনশীল সমাজ তৈরি করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার কথা শুনলাম। আমাদের প্রত্যাশা, সরকারি–বেসরকারি ও বিভিন্ন দাতা সংস্থাসহ সবার সম্মিলিত উদ্যোগে অচিরেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করি।
ফিরোজ চৌধুরী
আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।