কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকায় আসেন। থাকবেন কোথায়, আড্ডায়ই–বা জমবে কোনখানে? কেন, কাজী মোতাহার হোসেন আছেন না! দিনভর আড্ডা চলে কবি আর শিক্ষকে। সঙ্গে দাবার আসর। কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন ডাকসাইটে দাবাড়ু। উপমহাদেশের সেরা দাবাড়ুদের একজন। অবিভক্ত বাংলায় এবং পূর্ব পাকিস্তানে টানা ৩১ বছর আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি। বই পড়তে ভালোবাসতেন। লিখেছেনও বিস্তর। তাঁর লেখালেখি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জুগিয়েছে। লিখেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক বইও। তাঁর বিখ্যাত দুটি বই হলো আলোকবিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্রের ইতিহাস।
এমন প্রতিভাধর মানুষ অথচ আপাদমস্তক ভুলোমনা ছিলেন। এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজনকেও অনেক সময় চিনতে পারতেন না। তাই বলে নিজের মেয়েকেও! তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর মেয়ে সন্জীদা খাতুনও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কাজী মোতাহার হোসেনের ভালো গুণ ছিল, তিনি ছোট-বড় যে-ই হোক, পরিচিত মানুষ দেখলেই সালাম দিতেন। একদিন সন্জীদা খাতুনকেও সালাম দিলেন তিনি ‘ম্যাডাম’ সম্বোধন করে। তারপর মেয়ের দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলেন নিজের অফিসে।
সন্জীদা খাতুন ভীষণ রেগে গেলেন, ভাবলেন বাবা বুঝি তাঁর সঙ্গে মশকরা করছেন। মায়ের কাছে নালিশ করলেন বাবার বিরুদ্ধে, ‘বাবা আমাকে দেখেও সালাম দেয়, সম্মান দেখায়, না চেনার ভান করে।’ মোতাহার হোসেনের স্ত্রী তাঁকে বললেন, ‘মেয়ে অভিযোগ করেছে, তুমি নাকি ম্যাডাম-ট্যাডাম ডেকে ওকে সালাম দিয়েছ?’
কাজী মোতাহার হোসেন প্রথমে অবাক হলেন, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘ও, ওটা সন্জীদা ছিল! তাই তো বলি, চেনা চেনা লাগছিল কেন?’