এসএসসিকে জয়
‘এই কয়েকটা দিন সবকিছু ভুলে ভালোমতো লেখাপড়া করো। এসএসসি পরীক্ষা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটা ভালোমতো দাও, তারপর তো তুমি স্বাধীন। আর পড়ার কথা বলব না।’—এ কয়েক মাসে তোমরা এমন কথা কতবার শুনেছ, তার কোনো হিসাব আছে? আর ‘যাও পড়তে বসো’ এই কথাটা কতবার শুনছ তার হিসাব জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছেও নেই। ফলে বলা যেতে পারে এসএসসি পরীক্ষার এই সময়টা তোমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়, প্রতিবেশী, এলাকার দোকানদার চাচা সবাই দেখা হলেই তোমাকে জিজ্ঞেস করবে—এই, ‘তোমার না এসএসসি? প্রিপারেশন কেমন?’ শুনে হয়তো তোমাদের রাগ হতে পারে। আমারও হতো। কিন্তু এটাও সত্যি যে, এই কথাগুলো সবাই বলে তোমাদের একটু সাহস দেওয়ার জন্য, তোমাদের পাশে থাকার জন্য। খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। এটাকে ইতিবাচকভাবেই নেওয়া উচিত।
এসএসসি পরীক্ষাটা নিয়ে বেশি চাপে থাকে পরীক্ষার্থীরা। যদিও তোমরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী আর জেএসসি পরীক্ষার মতো বড় দুটো পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছ, তবু এসএসসি পরীক্ষাটা বেশি আলোচিত, সবার মধ্যেই এ পরীক্ষা নিয়ে একটা আগ্রহ থাকে। যখন এসএসসি পরীক্ষার ফল বেরোয়, সেদিন পত্রিকার শিরোনাম হয় এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে। ভি চিহ্ন দেখানো হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষার্থীদের ছবি দেখিয়ে বাবা মা বলে, ‘দ্যাখ, কতো ভালো রেজাল্ট করেছে, ওরাও তো ভাত খায়, তুই ভাত খাস, তোর রেজাল্টা ভালো হয় না কেন?’
বাবা-মাকে খুশি করতে তো আমরা সবাই চাই। আর তাদের খুশি করার একটাই উপায়—পরীক্ষায় ভালো করা। তুমি হয়তো খুব ভালো একটা গল্প লিখে ফেলেছ, কিংবা ক্রিকেটে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছ। তখনও বাবা মা বলবেন, ভালো, তবে পরীক্ষার রেজাল্টটা যেন ভালো হয়।
তাই এসএসসি পরীক্ষাটা খুব ভালো করে দাও তোমরা। তোমার নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য, স্কুলের জন্য। এসএসসির সময় বেশ একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ থাকে স্কুলগুলোতে। বাবা-মায়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যায়, পুরো পরীক্ষার সময়টায় রোদের মধ্যে রাস্তায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন বাবা-মা, অভিভাবকেরা। তাঁদের চোখেমুখে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, কারণ ভেতরে পরীক্ষা দিচ্ছে তাঁদের সন্তানেরা। সুন্দর একটা দৃশ্য কিন্তু। পরীক্ষাটাকে এমন সুন্দর একটা উৎসবই না হয় মনে করলে। ভয় না পেয়ে জয় করো এসএসসিকে। মন ভালো রেখে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে পরীক্ষা দাও। ফল ভালো হবেই। আর সঙ্গে তো আমরা আছিই। আমরা যখন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী আর জেএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে একটা সংখ্যা করলাম, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের চিঠিতে ভরে গেল কিআ কার্যালয়। দাবি একটাই—এসএসসি পরীক্ষা নিয়েও একটা সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। সে জন্যই এবারের প্রচ্ছদ রচনা। অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা পরামর্শ দিয়েছেন তোমাদের, যেন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি না থাকে। আশা করি পরমর্শগুলো তোমাদের কাজে লাগবে। শুভকামনা রইল তোমাদের জন্য।