আমি কেন চশমা বাদ দিলাম

পৃথিবীর সবচেয়ে বিচিত্র, আজব, উজবুক, মর্কট, অশিক্ষিত প্রাণী হলো চশমা। ওর কি কোনো আদবকায়দা নেই? আমার জীবনের গত দুই মাসে আমি যেসব অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি, তার সব ওই উজবুক চশমার জন্য ।

চোখে ঝাপসা দেখতাম। গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার তো দেখেই একটা চশমা হাতে ধরিয়ে দিলেন। চশমা পরে বাসার দিকে আসছি। দেখি সব মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে! ভাবলাম মনে হয় আমাকে দেখতে ‘কোহি মিল গ্যায়া’ মুভির হৃতিক রোশনের মতো লাগছে। বাসায় এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখটা দেখলাম। ও মা, একি! আস্ত একটা চশমা পরা রামছাগলের মতো লাগছে আমাকে। যে-ই চশমা খুলেছি, অমনি মানুষ। চশমা পরলেই রামছাগল। এ আবার কেমন কথা! এ জন্যই কি মানুষ আমাকে দেখে হাসছিল?

আবার গত মাসে হলি ক্রস কলেজের ফেস্টে গিয়েছিলাম। হ্যাঁ, চশমা নামক অপয়া বস্তুটি আমার সঙ্গে ছিল। বায়োলজি অলিম্পিয়াড শেষ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ কী মনে হতে চোখে হাত দিলাম। একি আমার চশমা আছে কিন্তু চশমার কাচ নেই! এ কেমন ব্যাপার হলো? কলেজভর্তি মেয়েরা সবাই আমাকে দেখছে আর হাসছে। লজ্জায় আমি এক কোনায় গিয়ে বসলাম। এ তো গেল কলেজের কথা। চিন্তা করলাম বাসায় গিয়ে কী বলব? বাবা তো ফ্যানের সঙ্গে উল্টো করে ঝোলাবে। এরপর কোনোরকমে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যাতে বাবা কিছু জিজ্ঞাসা না করতে পারে। পরদিন সকালে উঠেই নিজের জমানো টাকা দিয়ে চশমা কিনতে হলো। এই টাকাটা দিয়ে ভেবেছিলাম কিআ আর বিজ্ঞানচিন্তা কিনব। ওই ব্যাটা বেয়াদব, উজবুক চশমার জন্য আমার সব পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে গেল। আমি গত দুই মাস কিআ পড়তে পারিনি।

সেদিন থেকে আমি চশমা বাদ দিয়ে দিয়েছি। একটু কষ্ট হয়, তবে এত সব অপমানের থেকে কষ্ট করা ভালো।